এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার লাল সূর্যের রঙের সাথে মিশে আছে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনা। একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
রক্তে কেনা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে বাঙালি জাতি। স্বাধীনতার মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জানাচ্ছে বিনম্র শ্রদ্ধা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরেও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাংলার মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঘোষনা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
আলোচনার নামে তালবাহনার এক পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালরাতে অতর্কিতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা করে। সংঘটিত হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। ঐ কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাক বাহিনী গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
স্বাধীনতার অর্শশত বছর অতিক্রম করা জাতীয় জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। এক দশক আগেও বাংলাদেশকে যেখানে দারিদ্র্য আর অনুন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতো, এখন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা সেই বাংলাদেশই দারিদ্র্য জয় এবং উন্নয়নের আদর্শ মডেল হিসেবে তুলে ধরছেন। দেশের মানুষের জন্য এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব আরও বর্ণময় হয়েছে এজন্য যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সরকার পরিচালনা শুরু করার পর বাংলাদেশ সম্পর্কে সব নেতিবাচক ও নিরাশাবাচক ভবিষ্যদ্বাণী অসার প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।