প্রবন্ধ


বাবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের গল্প
আবু মোহাম্মদ আরিফ
সেকশন অফিসার (চ.দা.), ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউট
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতা বিভিন্ন সময় পারিবারিক আড্ডায় সন্তানদের নিকট মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরত। তারই একটি অংশ তুলে ধরলাম। ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বড় ছেলের স্কুল বন্ধ, সকালে নাস্তার টেবিলে বড় ছেলে বাবাকে বলল বাবা আজকে আমাদের স্কুল বন্ধ। আজ মহান বিজয় দিবস। বড় ছেলে বাবাকে বলল বাবা, বিজয় দিবস কি তুমি তা জানো? একথা শোনার সাথে সাথে বাবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু আর নীরবতা। তখন বড় ছেলে বললো, বাবা তোমার চোখে পানি কেন? তুমি কথা বলছো না কেন? বাবার নির্বাক চোখের নিরবতা তাকে আরো অস্থির করে তোলে। ছেলের আর তর সহ্য হয় না। বাবা অনেকক্ষণ পর নীরবতা ভেঙ্গে মুখ খুললেন। ছেলেকে বললেন, বাবা আমি জানি, বিজয় দিবস কি। ছেলে বললো বাবা কি? বাবা বললেন শোন তাহলে ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ, আমি তখন স্থানীয় নাঙ্গলমোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের তদানীন্তন চেয়ারম্যান এডভোকেট এ. এম য়্যাহয়্যা অস্থির ভাবে পায়চারী শুরু করলেন। আমি বললাম দাদা তোমাকে একটু অস্থির লাগছে মনে হয়। তিনি বললেন ঢাকা থেকে খবর এসেছে ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন যে, এইবার স্বাধিকার বা সমঝোতা নয়, স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন এবং বলেছেন ২ ও ৩ মার্চ হরতাল। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভা, আমাকে ঢাকা যেতে হবে। বড় ভাই আরো বললেন, আমাদেরকে স্বাধীন হতে হবে। বড় ভাই চলে গেলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু লক্ষ জনতার সম্মুখে ঘোষণা করলেন “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম”। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৭ দিন আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ হয়। হঠাৎ শুনি ২৬ মার্চ সকালে ঢাকায় ব্যাপক গোলযোগ হচ্ছে। পাকিস্তানি বাহিনী বাঙ্গালিদেরকে নির্বিচারে হত্যা করছে। তারপর রেডিও নিয়ে বসে পড়লাম। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান আওয়ামীলীগ নেতা এম. এ. হান্নান সাহেবের কন্ঠে শুনতে পাই- মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের পাশে আছেন এবং যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আমাদের যার যা আছে তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে, শত্রুর মোকাবেলা করতে। এভাবে ৫ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন।

একদিন শুনলাম আমাদের বাড়ি তথা চেয়ারম্যান বাড়ি আক্রমণ হবে। আমরা স্বপরিবারে নদী পার হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিলাম। এ ধরনের পরিস্থিতি আমাকে বিদ্রোহী করে তুলল। বঙ্গবন্ধুর আহবান এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম। বদন চৌধুরীর বাড়ির তাহের, নিজ বাড়ির রফিকুল, কাশেম (পাতলা), মোঃ কাশেম, ছিপাতলীর আজিজুল হক, মির্জাপুর গ্রামের সেনাসদস্য জাহাঙ্গীর ও মনছুর প্রমুখ আমরা সংগঠিত হই এবং ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কাটাখালির মাষ্টার কুদ্দুস, নাঙ্গলমোড়ার ছমদ ও আনোয়ার ভাই আমাদের সংগঠিত করে পায়ে হেঁটে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আমরা প্রথম খিরামের পূর্বে নাঙ্গলমোড়ার বরকত উল্ল্যার খামারে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে দুজন চাকমার সহায়তায় ৫০/৬০ মাইল পায়ে হেঁটে দুর্গম পথ অতিক্রম করি। মর্মকান্তি চৌধুরী নামক এক চাকমার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করে আবার যাত্রা শুরু করি। তারপর নতুন দুজন চাকমার সহায়তায় নিরাপদে দীর্ঘ পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে বর্ডার সংলগ্ন নদী পার হই, পার হওয়ার পর ভারতে এসে পড়ি। সেখানে একটি রেজিস্ট্রেশন অফিসে নাম তালিকাভুক্ত করার সময় হাটহাজারীর প্রাক্তন এম. পি শ্রদ্ধাভাজন এম. এ. ওহাব সাহেবের সাক্ষাৎ পাই। তিনি প্রতিনিয়ত সেখান থেকে হাটহাজারীর মুক্তি সংগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। এ মহান ব্যক্তির অবদান কোনদিন ভুলার নয়। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং আমার বড় ভাই চেয়ারম্যান সাহেবের পরিচয় জেনে চিন্তিত হয়ে পড়লেন- এবং বললেন তুমি আসাতে তার অসুবিধা হতে পারে, কারণ তিনি আমাদের লোক। তবুও তিনি আমাদের সাহসিকতার প্রশংসা করলেন এবং আমাদের পা-ফুলে যাওয়াতে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আমাদেরকে গাড়ি করে হরিনা ইয়ুথ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন। ১৭ দিন সেখানে হালকা ট্রেনিং হয়। ১৬/১৭ দিন পর বাছাই করে ত্রিপুরা পল্টনা নামক স্থানে শারীরিক ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। এক গ্রুপের জন্য একজন হাবিলদার নিয়োগ দেওয়া হয়, এরপর মূল ট্রেনিং শুরু হয়। দিনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ তথা অস্ত্র চালানো, খোলা, বাঁধা, ইত্যাদি। রাতে ব্রীজ ধ্বংস, আক্রমণ, মাইন ইত্যাদি গেরিলা ট্রেনিং ভারতীয় এবং বাংলাদেশি সৈন্যরা ৩১ দিন পর্যন্ত দিল। ট্রেনিং উত্তীর্ণদের পরবর্তী ইয়ুথ ক্যাম্পের পার্শ্বে এক সপ্তাহ ডিউটি করিয়ে অস্ত্র দেওয়া হয়। আমাকে দেওয়া হয় এস. এল. আর। দেশে পাঠানোর পূর্বে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে আমাদের শপথ পাঠ করানো হয়। তৎকালীন ছাত্র নেতা আস. স. ম আব্দুর রব ভাষণ দেন। তিনি বলেন- আমরা কার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে এসেছি? আমরা সমস্বরে বলি- বঙ্গবন্ধুর ডাকে। তিনি বলেন, দেশকে আমরা আজ নয়তো কাল স্বাধীন করবো ইনশা আল্লাহ, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত না করে অস্ত্র জমা দেব না। তাঁরই হাতে আমরা অস্ত্র জমা দেব। দেশে আসার পথে জুইগাছাড়া বাজারের পার্শ্বে হানাদার বাহিনীর সাথে আমাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। চাকমাদের পাহাড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তারা আমাদের উপর আক্রমণ করে, সেন্ট্রিরা জাগিয়ে দিলে আমাদের প্রতিরোধর মুখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা আবার বিকেলে আক্রমণ করে, এবার তারা দুর্বার প্রতিরোধের মুখে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায় এবং বেশ হতাহত হয়। এরপর আমরা সিটি গ্রুপ, ভিলেজ গ্রুপ ইত্যাদি এলাকায় বিভক্ত হয়ে দেশকে মুক্ত করার শপথ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ি।

আমার কোম্পানি প্রধান ছিলেন সেনাবাহিনীর আমিনুল হক, প্লাটুন কমান্ডার আবু তাহের ও গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন নূরুল হুদা। এরপর নিজ ইউনিয়নে এসে কয়েক মুহুর্তের জন্য মায়ের সাথে দেখা করি। মা বুকে জড়িয়ে কয়েক গ্রাস মোরগের গোশত দিয়ে বিন্নি ভাত মুখে তুলে দেন আর দোয়া করে বিদায় দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বললেন, তোমার বড় ভাই প্রতিদিন ৪/৫ জন যোদ্ধা ছেলে এনে আমাকে সান্তনা দিত এবং বলতো তোমার ছেলেও এদের মত অন্য জায়গায় যুদ্ধ করছে। মূলত আমাদের বাড়িটা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের শেল্টার কেন্দ্র। এখান থেকে হাটহাজারীর মুক্তি সংগ্রামের বিভিন্ন অপারেশনের প্রস্তুতি নেওয়া হত। ইউনিয়নের লোকজনকে দেখে খুব খুশি মনে হল। আমার ভাই চেয়ারম্যান সাহেব নিজ জীবন বাজি রেখে গ্রামকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচরণস্থলে পরিণত করেছেন। (বলা বাহুল্য যে, আমার ভাইয়ের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অবদান অত্র এলাকাবাসী এবং পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কখনো ভুলবেনা। তিনি তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ নয় মাস গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে পরিণত করেন। এজন্য দেশ স্বাধীন হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাকে একাধিক স্বর্ণ পদক দিয়ে সম্মানিত করেন)। আমি ও আমাদের বাহিনী সরকার হাটের পূর্বে ১১০০০ লাইন ভোল্টেজের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেই। সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের সাথে বিভিন্ন সংঘর্ষে আমরা দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিই।

হঠাৎ গৃহকর্তা থামলেন- ছেলে বললো বাবা তোমাদের কেউ শহীদ হয়নি? বাবা বললেন- মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলীম উল্ল্যাহ ও দলিল আহমদ আমাদের অহংকার। শেখ আলীম উল্ল্যাহ ও দলিল আহমদ এক অকুতোভয় যোদ্ধার নাম। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে ভারতে নিয়ে যাওয়ার সময় বহু যোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে তারা শাহাদাত বরণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে এই দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার আজও কোন মূল্যায়ন হয় নাই।

ছেলে বললো বাবা- স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তোমার কি কি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছো? বাবা বললো- আমরা বঙ্গবন্ধুর আহবানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং ঢাকা স্টেডিয়াম মাঠে তারই হাতে অস্ত্র জমা দিই, অস্ত্র জমা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন- দেশে যদি আরো তিন বছর যুদ্ধ চলতো তাহলে কি তোমরা যুদ্ধ করতে না? আমরা সমস্বরে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বললেন- আমি তিন বছর তোমাদের কিছু দিতে পারবো না- তোমরা আমার লালঘোড়া, দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ো, এ কথা আজো মনে পড়ে।

কিন্তু দেশ স্বাধীনের চার বছরের মাথায় এ নি:স্বার্থ দেশ প্রেমিক জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যা করে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। দেশ রক্ষা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব, এ মহান দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাই। স্বাধীনতার পর সরকার আমাদের জন্য চাল এবং টাকা বরাদ্দ করে। আমি তা আমার প্রতিবেশী গরীব চাচা মরহুম হাফিজুর রহমানের স্ত্রীকে দিয়ে দিই। যখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র পুনরায় আমাদের জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ হয়। আমি ও আমার সহযোদ্ধা রফিক ও শফি তা স্থানীয় স্কুল ছাত্রাবাসের জন্য দান করি। এ পর্যন্ত ভাগ্যের সন্ধানে দেশ বিদেশে শ্রম সাধনা করে এসেছি। অদ্যাবধি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্মানী ভাতা ছাড়া অন্য কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করি নাই। কিন্তু বাবা দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক অবদান যারা রেখেছেন অনেক ক্ষেত্রে তাদের কোন সঠিক মুল্যায়ন হচ্ছে না। যদিও নিভৃতি পল্লীর আত্মপ্রচার বিমুখ এসব মহান ব্যক্তি তাদের নাম চায় না। মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ পার হলেও মুক্তিযুদ্ধে বিরাট অবদানকারী গ্রাম গুমানমর্দ্দন আজও অবহেলিত। হালদা নদীর ভাঙ্গনে হাজারো পরিবারে গৃহহারা। এই এলাকাসহ বাংলার প্রতিটি গ্রামের দুঃখী মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি সব চেয়ে বেশি খুশি হতাম।

এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে বড় ছেলেটি যে গৃহকর্তার কথা শুনলেন তিনি হচ্ছেন আবু মোহাম্মদ এমরান। মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টর কমান্ডার এর অধিনে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সফল একজন শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার গুমানমর্দ্দন গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। তার পিতার নাম মরহুম আমিনউল্লাহ, মাতা- মরহুমা ছায়েরা খাতুন। উপচেপড়া প্রাচুর্যের জন্য যার হা হুতাশ নেই। আবার কোন কিছুর কমতি নেই। এসব কিছু কিন্তু তার একদিনে অর্জিত হয়নি। বছরের পর বছর সততা, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের ফসল। এ লক্ষ্য অর্জনে তার সবচেয়ে বড় অবলম্বন ছিল, ইস্পাত কঠিন এক আদর্শ। যে আদর্শ দেশ গড়ার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার । যে আদর্শ তাকে পথ দেখিয়েছে এবং আমাকে পথ দেখায়। শুধু আমি বা আমরা নই, যারা কোন না কোনভাবে বাবার সংস্পর্শে এসেছে তাদের হতাশাপূর্ণ জীবন বদলে গিয়ে সাফল্যের আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছে। আমার বাবার মত বাংলার মুক্তি সংগ্রামের সৈনিকরা তাদের নাম চায় না। নতুন প্রজন্ম জানুক তাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা, বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উচু করে দাঁড়াক বাংলাদেশ। এটাই তাদের প্রত্যাশা। বড় ছেলের চোখে পানি আসলো। বাবা তার চোখের পানি মুছে দিলেন। তারপর বাবা তাকে উপদেশ দিলেন- আমরা খুব স্বল্প সময়ের জন্য এ পৃথিবীতে এসেছি। সময়ের অঙ্কে যে যার দায়িত্বের পরিমন্ডলে সফল হবার চেষ্টা করে, এ চেষ্টায় কেউ সফল হয়, কাউকে আবার ব্যর্থতা গ্রাস করে। ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে সাফল্যের বীজ পুনঃরোপিত করতে হয়। তোমার সৎসাহস, আদর্শ ও পরিশ্রম দিয়ে এগিয়ে যাবে, সময়ের পরিক্রমায় একদিন তুমি পৌঁছে যাবে, তোমার প্রত্যাশিত স্বপ্নের দ্বারে।

আমার বাবা বিভিন্ন সময় আমাদেরকে যে গল্প বলত তার একটি অংশ এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। জাতির পিতার যে সোনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল আজ তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়নের পথে। পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার প্রতীক। চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু টানেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দিকদর্শন। দ্রুততম সময়ে করোনা ভ্যাকসিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার প্রমাণ। আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অভূতপূর্ব উন্নয়ন, সুশাসন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি প্রতিটি সূচকে আমরা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের সংসদ সদস্যরা তাদের সংসদে আজ দাবি তুলে আমাদেরকে বাংলাদেশের মত রাষ্ট্র বানিয়ে দাও।

আমার পিতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ আমাদের চেতনায় শাণিত করে গেছেন তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে পড়ুক।

বিঃ দ্রঃ উক্ত লেখার সম্পূর্ণ দায়ভার লেখকের