Students

  Teachers

  Staffs

 

শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণায় অনন্য সিভাসু : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ প্রকাশিত





মূল প্রতিবেদন সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
প্রকাশ : ৭ এপ্রিল ২০২১

দেশের একমাত্র এনাটমি জাদুঘর এবং পেট হাসপাতাল সমৃদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। প্রাণির ব্লাড ব্যাংক তৈরি, গবেষণায়ও এ বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করেছে দৃষ্টান্ত।‘জ্ঞান সেবা সমৃদ্ধি’র স্লোগান নিয়ে দক্ষ ও যুগোপযোগী ভেটেরিনারিয়ান তৈরির লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ। পরবর্তীতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে তৎকালীন সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই প্রেক্ষিতে সরকারের জারিকৃত অধ্যাদেশের মাধ্যমে ২০০৬ সালের ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।

যাত্রা শুরুর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়মিত গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালে ডিএনএ সেক্সিং প্রযুক্তির সাহায্যে শৌখিন পাখির লিঙ্গ নির্ধারণে সাফল্য পায় সিভাসুর একদল গবেষক। বাংলাদেশে এই প্রযুক্তিতে প্রথম সাফল্য অর্জিত হয়। আগে লিঙ্গ নির্ধারণে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করে পাখির নমুনা বিদেশে পাঠাতে হতো। এছাড়াও সিভাসু বাংলাদেশের সর্বপ্রথম প্রাণির ব্লাড ব্যাংক তৈরি করে। কাপ্তাই হ্রদে নামানো হয় সিভাসু গবেষণা তরী। বর্তমানে হ্রদে কার্প জাতীয় মাছ কেন কমে যাচ্ছে, এ সংক্রান্ত কারণ উদ্ঘাটনে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস মহামারীতে এই ভাইরাসের জিনোম রহস্য উন্মোচনও করে সিভাসু। এই গবেষণা কার্যক্রম বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ও বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথভাবে চালানো হয়।

সিভাসুর গবেষকরা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন, ছাদে রঙিন মাছ চাষের মডেল তৈরি, মলিকুলার ডিএনএ বারকোডিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিস মশা শনাক্তকরণ, মুরগির উন্নত জাত, ক্যাটল বিস্কুট, মুরগির রক্ত আমাশয় নিয়ন্ত্রণ, গরু-ছাগলের মরণব্যাধি প্রতিরোধ পদ্ধতি, নরম খোলসের কাঁকড়া চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছেন।প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধুমাত্র ‘ভেটেরিনারি মেডিসিন’ অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ‘খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ এবং ‘মাৎস্যবিজ্ঞান’ নামে আরো দুটি অনুষদ চালু করেছে। যার অধীনে রয়েছে মোট ১৮টি বিভাগ। এছাড়াও পোল্ট্রি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউট, ইন্সটিটিউট অব কোস্টাল বায়োডাইভারসিটি, মেরিন ফিসারিজ এবং ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন নামের তিনটি অনুষদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

২০১৫ সালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন দরিয়ানগর এলাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু হয়। এটিই বাংলাদেশের কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আউটরিচ ক্যাম্পাস। এখানে ছাত্রদের জন্য পৃথক দুটি ছাত্রাবাস এবং শিক্ষকদের জন্য আবাসনের কাজ চলমান রয়েছে। ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাহাড় ঘেরা ৫ একর জমি দেওয়া হয় ক্যাম্পাস তৈরির জন্য।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শতভাগ বিদেশে ইন্টার্নশিপের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে আসছেন ইন্টার্নশিপ করতে। এভাবে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট হয়ে গড়ে উঠছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান, মৎস্য ও খাদ্য বিজ্ঞানী তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এভাবেই এগিয়ে চলছে সিভাসু। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, এই প্রতিষ্ঠান এশিয়ার শীর্ষ ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে পরিণত হবে।

কোভিড মহামারীতে সিভাসুর কার্যক্রম :

করোনাকালীন সমস্যা মোকাবিলায় নিজস্ব আয় থেকে ২৫ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দেওয়া হয়। গত বছরের ২৫ এপ্রিল হতে করোনার পরীক্ষা শুরু করে সিভাসু। এতে এ কার্যক্রম আরও দ্রুততর ও কার্যকর হয় চট্টগ্রামে। ২৯ এপ্রিল জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে করোনা পরীক্ষার জন্য সিভাসু নিজেদের একটি আরটি-পিসিআর মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি স্থানান্তর করে। ৫ মে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে করোনা পরীক্ষা চালু করার লক্ষ্যে আরেকটি আরটি-পিসিআর মেশিন হস্তান্তর করে সিভাসু।

সিভাসু ও বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর যৌথ প্রচেষ্টায় এবং বিআইটিআইডি’র সার্বিক সহযোগিতায় ৭টি নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) এর পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচিত হয়। রুট গ্রুপের সহায়তায় ফেব্রিকস তৈরিতে গবেষণা চালানো হচ্ছে, যার সংস্পর্শে করোনা ভাইরাস ধ্বংস করা সম্ভব হবে।চাঁদপুরে সিভাসুর তত্ত্বাবধানে একটি করোনা পরীক্ষাগার স্থাপন করা হচ্ছে। সিভাসুর একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৭ জন গবেষক ল্যাবটির পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। হাটহাজারীতে সিভাসুর রিসার্চ অ্যান্ড ফার্ম বেজড ক্যাম্পাসে আরো একটি করোনা সনাক্তকরণ ল্যাবের নির্মাণকাজ চলমান। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন বায়োরিসোর্স সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শফিক আনাম বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানাবিধ গবেষণা নিয়ে কাজ করছে সিভাসু। যুক্তরাজ্যের রয়েল ভেটেরিনারি কলেজ (ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন), ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি, ভারতের তামিলনাডু ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে ভেটেরিনারি পেশায় উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সমর্থ হয়েছে।

সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি পোষা প্রাণির চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা; যেমন- মেডিসিন ইউনিট, সার্জারি ইউনিট, গাইনি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স ইউনিট, অর্থোপেডিক্স ইউনিট, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং ইউনিট এবং ভ্যাকসিনেশন ইউনিট রয়েছে। এখানে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গবেষণাগুলো পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গবেষণা বাংলাদেশ তথা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী। সবার সমন্বিত প্রয়াসে এগিয়ে যাচ্ছে সিভাসু।